সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাত বারের নির্বাচিত সাবেক সভাপতি, দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার সম্পাদক, জেলার ভূমিহীন আন্দোলনের অন্যতম নেতা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেছেন, সরকারি জমির বন্দোবস্ত পাওয়া প্রকৃত ভূমিহীনদের ন্যায্য অধিকার।
নব্বইয়ের দশকে সাতক্ষীরার দেবহাটা-কালীগঞ্জের ভূমিহীন আন্দোলন সারা দেশে আলোড়ন ফেলেছিল। সেসময় দেবহাটায় ভূমিহীন সমাবেশে যোগ দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্তৃর্ণ এসকল খাস সম্পত্তি প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও কিছু ভূমিদস্যুদের ষড়যন্ত্র ও জমির শ্রেণিগত ত্রুটির দোহাই দিয়ে দেবহাটার নোড়ারচকের এসব খাস জমির বেশিরভাগই ভূমিহীনরা অদ্যবধি বন্দোবস্ত পায়নি। বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে ভূমিহীনরা তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের পক্ষ হয়ে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। ভূমিহীনরা যখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মুখ চেয়ে দূর্দশায় দিন কাটাচ্ছে, ঠিক তখনই কিছু ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা একের পর এক এসব সরকারি জমি জবরদখল এবং কথিত রিসিভার পেতে অব্যাহত ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তারা সরকারের ভাবমূতি ক্ষুন্নের অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাদের দাতভাঙা জবাব দিতে ভূমিহীনরা অতীতেও পিছপা হয়নি, আগামীতের হবেনা। ভূমিহীনদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অবিলম্বে নোড়ারচকের সরকারি খাস জমি শ্রেণি পরিবর্তন করে সেখানে বসবাসরত ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দিতে হবে। শুক্রবার বিকেলে দেবহাটার ভূমিহীন অধ্যুষিত জনপদ নোড়ারচকের ফুটবল মাঠে ভূমিহীন সমাবেশে বক্তৃতাকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রশাসনের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।
বক্তৃতার একপর্যায়ে নোড়ারচক এবং খলিশাখালি দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ইস্যু উল্লেখ করে ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সাতক্ষীরা জর্জকোর্টের সাবেক জিপি অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান, দেবহাটার বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন, আমজাদসহ কয়েকজন ভূমিদস্যুকে উদ্দেশ্য করে আবু আহমেদ আরও বলেন, আপনারা ভূমিহীনদেরকে উচ্ছেদের যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন, তা এখনই বন্ধ করুন। ভূমিহীনদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেললে আপনাদের ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলেও হুশিয়ারি করেন তিনি।
পাশাপাশি নোড়ারচকের ভূমিহীনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নোড়ারচক সরকারি সম্পত্তি, আর খলিশাখালি ব্যাক্তি মালিকানার রেকর্ডিয় সম্পত্তি। নোড়ারচকের সরকারি সম্পত্তি বন্দোবস্ত পেতে আপনাদের চলমান আন্দোল-সংগ্রামে আমরা সবসময় পাশে আছি। কিন্তু যদি নোড়ার চকের কোন ভূমিহীন খলিশাখালির রেকর্ডিয় জমি জবরদখলের সাথে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে তাকে নোড়ার চকের ভূমিহীন জনপদ ছেড়ে যেতে হবে। কোন অপরাধীর সাথে আমাদের একাত্মতা থাকবেনা বলেও বক্তব্যে ভূমিহীনদের সাফ জানিয়ে দেন আবু আহমেদ। একইসাথে নোড়ারচকের কোন নীরিহ পরিবারকে হয়রানী না করতে প্রশাসন ও খলিশাখালির পুনরুদ্ধারকৃত জমির মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নোড়ারচক-চারকুনি ভূমিহীন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আব্দুল গফফারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন দেবহাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শাওন ও দেবহাটা-কালীগঞ্জ ভূমিহীন সমিতির সভাপতি ওহাব আলী সরদার। এসময় নোড়ারচকে বসবাসরত কয়েকশ ভূমিহীন পরিবার উপস্থিত ছিলেন।