ভূমি দস্যুদের বাঁধায় পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালীর বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের শামচাদঁ ৭নং ওয়ার্ডের মৃত নুরুল ইসলাম মুন্সির পুত্র কৃষক মো. এরশাদ মুন্সির (৩৮) পরিবার তাদের ৩.৯ একর জমি চাষাবাদ করতে পারছে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও থানা পুলিশের কাছে বারবার অভিযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে চরম হতাশায় রয়েছে কৃষক পরিবারটি। একই এলাকার প্রতিপক্ষ ভূমি দস্যু জাকির মুন্সি (৫৫) ও তার নেতৃত্বে আ. মন্নান মুন্সি (৬০), মো. তসলিম মুন্সি (৫৫), মফিদুল মুন্সি (৪৫), খোকন মুন্সী (৪০), ইকবাল মুন্সী (৪৫), দুলাল মুন্সি (৪৫), তুহিন মুন্সি (৪০) ও সিপন মুন্সিরা পেশি শক্তির বলে ওই কৃষক পরিবারের দীর্ঘদিনের ভোগ দখলীয় রেকর্ডকৃত জমি চাষাবাদ করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশনা এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি রাখা যাবে না তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না ভূমি দস্যুদের দৌরাত্মে।
কৃষক পরিবারটির অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাঙ্গাবালী উপজেলার ২ নং বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের ১৩৫নং টুঙ্গিবাড়িয়া মৌজার এসএ ৯৮,৯৮,৯৯ নং খতিয়ানের হাল দাগ নং- ১৬৪০, ১৬৬৩, ১৬৪৭,১৭০৭,১৭০১,১৭০০,১৭১০ নং দাগের ৩ দশমিক ৯ একর আবাদি জমি সকল প্রকার কাগজপত্র থাকা স্বত্তেও কৃষক এরশাদ মুন্সি জমি চাষাবাদ করতে পারছে না। জমিতে হালচাষ শুরু করলেই প্রতিপক্ষরা দলবল নিয়ে বাঁধা দেয়া, হুমকি ধমকি দেয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সালিশ বৈঠকে বিরোধ সমাধানের চেষ্টা করেও মিমাংসা হয়নি। পরে জেলা সিনিয়র জজ কোর্টে দেওয়ানি মামলা করেন কৃষক এরশাদ। যার দেওয়ানি মামলা নং-৫৪২/২২। সে মামলায় প্রতিপক্ষদের একাধিক সমন দিলেও তারা হাজির হয়নি কোর্টে। ফলে কোর্ট থেকে কৃষক এরশাদ এর পক্ষে প্রাথমিক রায় দেয় এবং যার যার অবস্থানে থাকতে স্থিতাবস্থা যারি করা হয়। প্রতিপক্ষকে ওই জমিতে কোন রকম বাঁধা বিঘ্ন, আকার আকৃতি পরিবর্তন, গাছ কাটা, ঘর নির্মাণ করতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ ভূমি দস্যুরা তা অমান্য করে ওই জমিতে গোলমাল সৃষ্টি করেই চলছে এবং চাষাবাদে বাঁধা দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে—রাঙ্গাবালী থানার ওসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় দরিদ্র কৃষক পরিবারটি চাষাবাদ করতে না পেরে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কৃষক মো. এরশাদ মুন্সি বলেন, থানার ওসির কাছে অভিযোগ দিয়েও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। জমিতে চাষাবাদ করতে গেলেই জাকির মুন্সি দলবেঁধে এসে বাঁধা দেয়, হুমকি ধমকি দেয়। আমি দরিদ্র নিরীহ কৃষক চাষাবাদ করতে না পারলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। আমি প্রশাসন ও প্রধানন্ত্রীর কাছে এর সমাধান চাই।
এরশাদের বোন ডেইজি বেগম বলেন, আমাদের বাবার রেকর্ডকৃত সম্পত্তিতে আমরা দীর্ঘদিন ভোগদখল করে চাষাবাদ করেছি। কিন্তু হটাৎ লোভী ভূমিদস্যু জাকির মুন্সি ও তার সঙ্গীরা আমাদের জমি দখল করতে চায়। আমাদের জমিতে চাষাবাদ করতে দেয় না। তারা আমাদের৷ প্রাণ নাশের হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। তাদের কারণে জমিতে চাষাবাদ করতে না পারায় অনাবাদি পড়ে রয়েছে। এখন আমাদের কি হবে, না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দিলাম তিনি যেন ব্যবস্থা নেয়।
প্রতিপক্ষ জাকির মুন্সি বলেন, এরশাদের বাবা জমি বেশি রেকর্ড করে নিয়ে গেছে। যে পরিমান জমির কথা বলছে তা তারা পাবে না। সে কারণে জমি চাষাবাদ হচ্ছে না। আর এরশাদের জমিতে চাষাবাদে বাঁধা দেয়া হয়নি। বাঁধা দেয়া হয়েছে অন্যান্য শরিকের জমিতে।
এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ‘উভয়পক্ষকে ডেকে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছি। এ নিয়ে একাধিক বার সালিশ বৈঠক হয়েছে কিন্তু বিষয়টি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি।’