স্বপ্নের একাংশ পূর্ণ হলেও বাকি স্বপ্নরা এভাবে হারিয়ে যায়……!
মোঃ আজগার আলী,জেলা প্রতিনিধি
সা’দ ও জুবায়ের দুই ভাই। দুজনের মধ্যে জুবায়ের বয়সে ছোট। সে সবেমাত্র কোরআন কারীমের হেফজ সম্পন্ন করেছে। আগামী বছর আল্লাহর তৌফিকে সে আলেম হওয়ার জন্য বড় মাদ্রাসায় ভর্তি হবে।
জুবায়ের বাবা মায়ের মনে অনেক স্বপ্ন যে আমার ছেলে দিনের হাফেজ হবে, দিনের বড় আলেম হবে। আলহামদুলিল্লাহ স্বপ্নের একাংশ পূর্ণ হয়েছে ছেলে হাফেজ হয়েছে এখন সে বড় আলেম হবে। কিন্তু অনেক সময় স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায়। স্বপ্নগুলো কলিতেই ঝরে যায়, তেমনি হলো জুবায়ের বেলায়ও।
সা’দ এবং জুবায়ের দুই ভাই। ওদের কোন বোন নেই। মায়ের পরিবারের কাজে তাই অন্যকেও সেভাবে সহযোগিতা করার মত ছিল না। কিন্তু জুবায়ের ছোটবেলা থেকেই মায়ের পাশে থেকে তার কাজে সহযোগিতা করত। কাজ এগিয়ে দিতো পরিবারের একটি বোনের অভাব জুবায়ের তার মাকে কখনো অনুভব করতে দেয়নি।
জুবায়েরের মমতাময়ী মা কিছুদিন পূর্বে একদিন অসুস্থ হলেন। বাসায় রান্না প্রস্তুত করতে পারেননি জুবায়ের সকালবেলা মাদ্রাসায় চলে যাবে সে হোটেল থেকে তিনটি পরোটা কিনে নিয়ে আসলো সে কিছু খেয়ে মায়ের কাছে বাকি কিছু রেখে গেল। বলল আম্মা তুমি সুযোগ মতো উঠে খেয়ে নিও ।আমি এখন মাদ্রাসায় যাচ্ছি । আমার বিরতি হলে আমি এসে তোমার থালা প্লেট হাড়ি পাতিল সব ধুয়ে পরিষ্কার করে দেবো।
জুবায়ের প্রতিদিনই তাদের পরিবারের একটি বোনের অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করার চেষ্টা করত এবং যথাসাধ্য সে তার মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকতো।
মায়ের চোখের সামনে এখন জুবায়েরের এইসব কথা ও কাজগুলো স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠছে, আর কত না বেদনাহত করছে।
গত শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন তাই অন্যান্য ছাত্রদের মতো জুবায়ের বাসায় আসলো। শখ করে সে তার পাশের বাড়ির রাহাত বন্ধুর সাথে মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে বের হলো। কেউ কি জানতো আজকের পরে সে আর মোটরসাইকেল চালাতে পারবে না!
আজকের পর থেকে তার নামের শেষে যুক্ত করে ডাকা হবে শহীদ জুবায়ের রাহমাতুল্লাহি আলাইহি?!
এ ভাবেই সে মা-বাবা নানা-নানি মামা সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে এই দুনিয়া ছেড়ে?
বাসার কেউ জানতো না যে, সে এখন কোথায় যাবে তার মমতাময়ী মা তাকে জুবায়ের বলে ডাকলো , সে বললো: মা আজকে আমি একটু ব্যস্ত! তুমি আমাকে কিছু বলো না মা। তাই তাকে আর কিছু বলল না, জুবায়ের পাশের বাড়ির বন্ধুকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে গেল বেড়াতে। আর সেখানে এক্সিডেন্ট হলো বিপরীতমুখী মোটরসাইকেল মোটরসাইকেল ও বাসের সাথে। প্রচন্ড ধাক্কায় জুবায়েরের একাধিকপাঁজরের হাড় ভেঙ্গে গেল , মাথার খুলি মুখের বাম পাশের চোয়াল সবকিছু ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। রক্তের চারিদিকে বন্যা বয়ে যেতে লাগলো। জীবন্ত একটি প্রাণ মুহূর্তেই নিথর নিষ্প্রাণ হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পরে জুবায়েরের বাবার ফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসলো। তাকে এমন খবর জানানো হলো, যে খবর শোনার জন্য তিনি কখনোই প্রতীক্ষায় ছিলেন না……! দ্রুত তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। কর্তব্যরত চিকিৎসক বললেন জুবায়ের আরো অনেক আগেই আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে।
এর পরের চিত্র কি হতে পারে পাঠক আপনি একটু কল্পনা করে নিন। অনুভব করুন। আমার কলম সে দৃশ্যের চিত্রায়ন করতে অপারগতা।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার ( ১০ই ফেব্রুয়ারী ) বেলা ১১ টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের বিনেরপোতা এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুটি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে হাফেজ জুবায়ের হোসেন এর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয় আরো দুইজন।
স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরার ইটাগাছা বাঙ্গালের মোড় শেখ কবিরুজ্জামান মুন্নার ছোট ছেলে হাফেজ শেখ জুবায়ের সহ আরো দুইজন একটি মোটর সাইকেলে সাতক্ষীরা থেকে ঋশিল্পী হয়ে বাইপাস অভিমুখে রওনা হয়। পথিমধ্যে বিনেরপোতা ঋশিল্পী এলাকায় পৌছালে সামনের দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাফেজ জুবায়েরকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় আহত তালা উপজেলার পাটকেলঘাটার তরিকুল ইসলাম ও আহমেদ জারিফ রাহাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তরিকুল ইসলামের অবস্থার আরো অবনতি ঘটায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আমরা আশা করি জুবায়ের জান্নাতে গিয়ে জান্নাতের পাখিদের সাথে মিলিত হয়েছে এবং আশা করছি সে জান্নাতের সুপ্রশস্ত উদ্যানে বিচরণ করছে এবং পাখিদের সাথে আনন্দ উদযাপন করছে। ইচ্ছামত সে জান্নাতের ফল গুলো পেড়ে পেড়ে খাচ্ছে।
وفيها ما تشتهيه الأنفس وتلذ الأعين، وأنتم فيها خالدون.
জুবায়ের সম্পর্কে আমার আপন ফুফাতো বোনের ছেলে। সত্যিই জুবায়ের কে হারিয়ে আমি অত্যন্ত শোকাহত। মৃত্যু কখন কার কাছে চলে আসবে কেউ বলতে পারবো না। মহান মালিক যেন আমাদেরকে এই সকল ঘটনা থেকে শিক্ষা লাভ করার তৌফিক দান করেন। জুবায়েরের পিতা-মাতা দাদা-দাদি নানা-নানীসহ সকলকে আল্লাহ তায়ালা সান্ত্বনা দান করুন , এবং উত্তম ধৈর্য দান করুন আমিন।