হাতীবান্ধায় চৌকিদার পাঠিয়ে স্বামী-স্ত্রী মারধরের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালিখি করায় এবার স্বামী-স্ত্রীকে বাড়ি থেকে গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) দিয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের বিরুদ্ধে। গুরুত্বর আহত ওই দম্পতি বর্তমানে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনায় রবিবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলকে প্রধান আসামী করে মোট দশ জনের নামে হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী হাসিনা বেগম। এর আগে শনিবার ভোরে উপজেলার মিলন বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
অভিযুক্তরা হলেন, গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল, মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল, গ্রাম পুলিশ পাভেল, আফজাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, শহিদুল ইসলাম, ভবেন্দ্র, আব্দুল গফুর, নূরনবী ও আজিজ।
গুরুত্বর আহত হলেন, উপজেলার মধ্য গড্ডিমারী গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে শাহ আলম শাহ ও তার স্ত্রী হাসিনা বেগম।
জানা গেছে, শাহ আলম শাহ বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের অনিয়ম-দূর্নীতি নিয়ে লেখা লিখি করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার ভোরে ইউপি চেয়ারম্যান শ্যামল শাহ আলমকে তুলে আনার জন্য তার বাড়িতে ৮-১০ জন গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে দেয়। গ্রাম পুলিশরা শাহ আলমকে নির্যাতন ও মারধর করেন। এ সময় স্বামী শাহ আলমকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে স্ত্রী হাসিনা বেগমকেও বেধড়ক মারধর করেন তারা। এরপর জোড় পূর্বক শাহ আলমকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন গ্রাম পুলিশরা। শাহ আলমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা পথিমধ্যে মিলনবাজার এলাকায় স্থানীয়রা তাকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মশিয়ার রহমান বলেন, চৌকিদাররা জোড় পূর্বক শাহ আলমকে টেনে হিচড়ে অটোতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো। আমরা স্থানীয়রা কারন জানতে চাইলে তার কোন সদূত্তর দিতে পারেননি চৌকিদাররা। পরে স্থানীয়রা শাহ আলমকে গুরুত্বর অবস্থায় উদ্ধার করে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আল আকসা বলেন, আহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সুস্থ্য হলে বাড়ি চলে যেতে পারবে।
এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার শাহ আলম বলেন, শ্যামল আমার বাড়িতে চৌকিদার পাঠিয়ে আমাকে আর আমার স্ত্রীকে নির্যাতন ও মারধর করে। আমি আর কিছুই বলতে পারি না। চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে।
এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার শাহ আলমের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, শ্যামল চেয়ারম্যান আমাকে ও আমার স্বামীকে চৌকিদার দিয়ে মারধর করেছেন। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে গ্রাম পুলিশ পাভেল বলেন, আমরা শাহ আলমকে মারধর করিনি। শ্যামল স্যার তাকে পরিষদে নিয়ে আসতে বলেন তাই আমরা তার বাড়ি থেকে তাকে নিয়ে আসতে যাই।
এ বিষয়ে জানতে গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের মোবাইল ফোনে ০১৭১৭০৬১৪২২ একাধিক বার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গতঃ এই আ’লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল একের পর এক বিতর্কে জড়াচ্ছেন। এর আগেও এই চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধার সন্তান গ্রাম পুলিশ বিপুল চন্দ্রকে মারধর করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের করে দিয়েছেন। এই আ’লীগ নেতা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি জমি দখল করে রেস্টুরেন্ট তৈরি করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। শুধু তাই নয় সম্প্রতি উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের হুমকি-ধামকি, কুটক্তি বেফাস বক্তব্য দিয়ে বিতর্কে জড়ান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিন্দুর্নার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন গরু মাংস খায়, তাই তারা নৌকায় ভোট দেয় না। নৌকায় ভোট না দিলে মন্দির ভেঙ্গে দেয়া হবে, পূজা আর্চনা করতে দেয়া হবে না আর মারধর করে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। এরপর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আ’লীগের আশ্রয়প্রশ্রয়ে এদেশে বসবাস করছেন বলে এমন বক্তব্য দিলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
হযরত আলী। হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট।