ঢাবিতে সাবেক শিক্ষকের গাড়িচাপায় নারীর মৃত্যু

প্রকাশিত: ৫:২৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০২২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক এক শিক্ষকের গাড়িচাপায় রুবিনা আক্তার (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার গণপিটুনির শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন অভিযুক্ত সাবেক শিক্ষক আজহার জাফর শাহ, গাড়িটি তিনিই চালাচ্ছিলেন। এদিকে দুর্ঘটনার খবর শুনে নিহতের স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ছুটে আসেন।

স্বজনরা জানান, রুবিনার স্বামী ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান দুই বছর আগে মারা যান। এরপর অষ্টম শ্রেণীতে পড়া একমাত্র ছেলে রোহানকে নিয়ে ওই গৃহিণী তেজগাঁওয়ের হোন্ডা গলিতে থাকতেন। ওই বাসা থেকেই দেবর নুরুল আমিনের মোটরসাইকেলে করে হাজারীবাগে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে বিকাল ৩টার দিকে ঢাবির চারুকলাসংলগ্ন এলাকায় তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয় জাফর শাহর প্রাইভেটকার। এতে ভুক্তভোগী ওই নারী গাড়ির নিচে পড়ে আটকে যান। এ অবস্থাতেই গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে সামনের দিকে ছুটে চলে। পরে সাধারণ জনতা পেছন থেকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে নীলক্ষেত মোড়ের কাছাকাছি গাড়িকে আটক করা হয়। গাড়ির নিচ থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে রুবিনাকে ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে নীলক্ষেতে গাড়িটি আটকানোর পর সাধারণ জনতা গাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং চালক জাফর শাহকে গণপিটুনি দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। একপর্যায়ে পুলিশ এসে জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহত চালককে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়।

দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা উপপুলিশ পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন বণিক বার্তাকে (রাত ৯টা) বলেন, প্রথমে রুবিনা আক্তারকে বহনকারী মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয় ঢাবির সাবেক শিক্ষক আজহার জাফর শাহর গাড়ি। পরে ওই নারী রাস্তায় পড়ে গেলে তার ওপর দিয়েই গাড়িটি চালিয়ে দেয়া হয়। এতে তিনি গাড়ির নিচে আটকে যান। প্রায় এক কিলোমিটার ধাওয়া করার পর জনতা গাড়িটিকে আটক করে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

ঢামেক হাসপাতালে কথা হয় নিহতের দেবর রুহুল আমিনের সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি বাইক চালাচ্ছিলাম। ভাবি আমার পেছনে বসা। গাড়িটি বাইকে ধাক্কা দেয়ার পর রাস্তায় পড়ে যাওয়া ভাবিকে চাপা দিয়ে টেনে নিয়ে যায় আমার সামনে দিয়েই। আমি গাড়ি থামাতে বললেও চালক গাড়ি না থামিয়ে চলতে থাকল। এতেই আমার ভাবির মৃত্যু হয়। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি আরো বলেন, ভাবির ছোট একটা বাচ্চা আছে, নাম রোহান। তার বাবা নেই, এখন মা-ও মারা গেল। আমার ছোট ভাতিজার কী হবে এখন?

ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রায় এক যুগ আগে তার (জাফর শাহ) বিরুদ্ধে নৈতিক অবক্ষয়সহ বেশকিছু অভিযোগ ওঠে। আর শিক্ষক হিসেবে এই একটা অভিযোগই তাকে বহিষ্কার করার জন্য যথেষ্ট। পরে তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা যাচাইপূর্বক ২০১৬ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।’ আহত সাবেক ওই শিক্ষকের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় দায়বদ্ধ নয় জানিয়ে প্রক্টর বলেন, যেহেতু তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত, সেহেতু উনার দায়িত্ব নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া তিনি অমানবিক একটা কাজ করেছেন।’

এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার পর অতিরিক্ত যানবাহন বন্ধ করে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মশাল হাতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ইউনিয়নের এ মশাল মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।