ডেঙ্গুতে তছনছ বহু পরিবার

প্রকাশিত: ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩

এডিস মশার ভয়াল থাবায় জনজীবন বিপন্ন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ডেঙ্গুর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। চোখের সামনে চিরতরে চলে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। মা-বাবার সামনেই হারিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রিয় সন্তান। না-ফেরার দেশে চলে যাচ্ছে শিশু-কিশোর ও স্কুল-কলেজের শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থী। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের বাবা-মা ও পরিবারের সব স্বপ্ন। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থীসহ সাতজন মারা গেছেন।

সরকারি হিসাবে চলতি বছরের নয় মাসে এক দিন থেকে ২৫ বছর বয়সি ৮১ হাজার ৪১৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং ২২১ জন মারা গেছেন। শরীরের রক্ত পানি করে তিলে তিলে গড়ে তোলা সন্তানদের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অভিভাবকরা। এসব করুণ মৃত্যু একেকটি পরিবারকে তছনছ করে দিচ্ছে। তিন মাসে ডেঙ্গুতে যেসব শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ভাইবোনের মৃত্যু অনেকের নজর কেড়েছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৯ বছরের শিশু আরাফাত হোসেন রাউফ ও ৬ বছরের ইসনাত জাহান রাইদার মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। ওরা ছিল পিঠাপিঠি। ছিল দুজনের খুনসুটি। স্থানীয় আইকন একাডেমির কেজি ও নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল তারা। ১৮ আগস্ট রাউফ ও ২৫ আগস্ট রাইদার জীবন কেড়ে নেয় ডেঙ্গু। রাজধানীর মিরপুর পাইকপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি প্রাণের দুই সন্তানকে হারিয়ে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। যে বাসায় রাউফ-রাইদার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, সেই বাসাটি এখন বিরানভূমি। তারা সন্তানের স্মৃতি ভুলতে ওই বাসাটিও ছেড়ে দেন।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শাখার (মতিঝিল) সামনে ঝুলছে তিন অবুঝ শিক্ষার্থীর শোকের ছবি। তাদের তিনজনের জীবন কেড়েছে ডেঙ্গু। কালো ব্যানারে মোড়ানো তিন শিশুর ছবি দেখে অনেকেই নীরবে চোখ মুছেন। অন্য শিক্ষার্থীরাও দাঁড়িয়ে কাঁদেন। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, আমাদের এই সমাজ এসব অবুঝ শিশুর জীবন রক্ষা করতে পারছে না। মশক নিধনে ব্যর্থতার জন্য মন্ত্রী দোষ চাপান মেয়রের ওপর। মেয়ররা বক্তৃতা করেন। এভাবে তারা নিজেরা দায় এড়ান। কিন্তু মাঝখানে সন্তানদের জীবন চলে যাচ্ছে। আমরা অসহায় বোধ করছি।