সুদানে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে, ঈদের দিন খার্তুম যেন ভুতুড়ে শহর

প্রকাশিত: ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৩

সুদানের রাজধানী খার্তুমের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মুসলিমদের ঈদ উৎসবের সময় শহরে যে আনন্দমুখর পরিবেশ দেখা যায়, তার তুলনায় এবার শহরের কিছু কিছু অংশ রীতিমত ভুতুড়ে চেহারা নিয়েছে।

সুদানের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লড়াই শুরু হওয়ার পর এক সপ্তাহে এ পর্যন্ত চারশো মানুষ নিহত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খার্তুমে গুলি, বোমা এবং গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।

এর মানে হচ্ছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ তিনদিনের যে যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েছিল, তা ভেস্তে গেছে।

খার্তুম এবং এর লাগোয়া শহর ওমডুরমানের বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা এখনো এই সংঘাতের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি, তারা ক্ষুব্ধ।

একটি মসজিদের প্রবেশপথে দুই নারী কাঁদছিলেন। তারা জানান, দুটি শিশুসহ তারা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন।

মুসলিমরা রমজান মাসে রোজার শেষে ঈদ-উল-ফিতরের উৎসব পালন করে। সুদানের মানুষ সাধারণত এই উৎসবের সময় তাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীকে দেখতে যায়, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে।

ঈদের দিন নামাজে সাধারণত বহু মানুষ হয়। কিন্তু শুক্রবার খার্তুম এবং ওমডুরমানের অনেক মসজিদ ছিল ফাঁকা। লড়াই থেকে বাঁচতে লোকজন তাদের ঘরে লুকিয়ে আছে।

অনেকে আবার শহর ছেড়ে তাদের নিজের নিজের এলাকার বাড়িতে চলে গেছে।

এর আগেও দুবার যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেয়া হয়, কিন্তু দুবারই তা বিফল হয়।

লড়াই থামানোর জন্য কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো হচ্ছে- অনেক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে।

সুদানে কিভাবে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনা হবে, মূলত তা নিয়ে দুই ক্ষমতাধর সামরিক অধিনায়কের দ্বন্দ্ব থেকে এই লড়াই চলছে।

সুদানের বর্তমান সামরিক সরকার চলে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে। তার সঙ্গে উপনেতা হিসেবে আছেন আরেকটি আধা-সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেডটি ডাগালো। বেসামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই দুটি বাহিনীকে একীভূত করার কথা।

কিন্তু আরএসএফ তাদের বিলুপ্ত করার বিপক্ষে, এবং এই পরিকল্পনা থামানোর জন্য তাদের বাহিনীকে রাস্তায় নামায়। এরপর এটি সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে।

জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, দশ হাজার হতে বিশ হাজার মানুষ- যাদের বেশিরভাগ নারী এবং শিশু, সুদান ছেড়ে পালিয়েছে পাশের দেশ চাডে আশ্রয় নেয়ার জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার যুদ্ধরত দুই পক্ষের প্রতি অন্তত রোববার পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন।

সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জেনারেল বুরহান তুরস্ক, দক্ষিণ সুদান এবং ইথিওপিয়ার নেতাদের কাছ থেকে ফোন কল পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও তাকে ফোন করেছিলেন।